সব প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে বিসিএস ক্যাডার হন চট্টগ্রামের মেয়ে নাঈমা

তিনি যখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়তেন তখন থেকে তার ইচ্ছা ছিল উচ্চ শিক্ষায় বড় হয়ে দেশের জন্য কিছু করবেন। সব সময়ই স্বপ্ন দেখতেন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে আমূল পাল্টে দেবেন। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি বাস্তবমুখী শিক্ষায় গড়ে তুলবেন শিক্ষার্থীদের। তবে কৈশোরেই সে স্বপ্ন ভেঙ্গে যেতে বসেছিল। রক্ষণশীল পরিবারের জন্ম নেওয়া একজন মেয়ে হওয়ায় এসএসসি পরীক্ষার পরেই বিয়ে দেয়ার চিন্তা শুরু হয় পরিবারে। তবে তিনি সব প্রতিকূলতা পেছনে ফেলে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ৩৬তম বিসিএস পরীক্ষায় শিক্ষা ক্যাডারে মনোনীত হয়েছেন।

এতক্ষন, যার কথা বলছিলাম তিনি হলেন জান্নাতুল নাইম চৌধুরী নাঈমা। রক্ষণশীল পরিবারের বাধা ঠেলে তিনি এখন বিসিএস ক্যাডার।
চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী পৌর সভার, চাগাচর ১ নং ওয়ার্ডের চৌধুরী বাড়ির সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম নাঈমার। দোহাজারীর সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি হাজী মালেকুজ্জামান চৌধুরীর পুত্র ব্যবসায়ী আলহাজ্ব আব্দুল মাবুদ চৌধুরী ও পুত্রবধূ আলহাজ্ব রহিমা বেগমের পঞ্চম সন্তান নাঈমা। ছয় ভাইবোনের মধ্যে বোনদের মধ্যে ছোট ও পঞ্চম নাঈমা।

শিক্ষা জীবনের শুরু থেকেই প্রচন্ড মেধাবী নাঈমা প্রাথমিক শিক্ষা শেষে ভর্তি হন। মাধ্যমিকে দোহাজারী আঃ রঃ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০৫ সালে বিজ্ঞান বিভাগ এবং ২০০৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে বিজিসি ট্রাস্ট এর বেগম গুল চেমন আরা একাডেমী হতে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন।

এরপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারী হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের অর্থনীতি বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স দুই পরীক্ষাতেও প্রথম বিভাগেই উত্তীর্ণ হন।

জানতে চাইলে নাঈমা বলেন, গ্রামে জন্ম হওয়া সব মেয়ের মত আমারও অল্প বয়সে বিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করা হয় পরিবারে। কিন্তু আমার মেঝ ভাই সাংবাদিক চৌধুরী রাসেলের বাধার মুখে আমার বিয়ে দিতে পারে নি। পরে তিনি আমাকে গ্রাম থেকে শহরে নিয়ে আসেন এবং তার অনুপ্রেরণা, সাহস ও আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হই। এরপর বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে শিক্ষা ক্যাডারে মনোনিত হলাম।

আমি এতটুকু আসার পিছনে আমার মা-বাবার দোয়া, বড় ভাইয়ের সাহস, শিক্ষকদের অনুপ্রেরনা, সহপাঠীদের আন্তরিকতা আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছে। আমি সবার কাছে দোয়া চাই, যেন জনগণের সেবা করে যেতে পারি।
নাঈমা আরো জানান, দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখার জন্য দেশের বাইরে থেকে উচ্চতর গবেষনায় ডিগ্রী অর্জন করার ইচ্ছে আছে তার।